প্রাচীন যুগ থেকেই গায়ের রঙ নিয়ে মানুষের নানান চিন্তা। অনেকেরই কাম্য একটি ফর্সা সুন্দর ত্বকের। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, শারীরিক অসুস্থতা, দীর্ঘসময় রান্নাঘরে কাজ করা ইত্যাদি নানান কারণে ত্বক হারিয়ে ফেলে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা। হয়ে যায় কালচে ও বিবর্ণ। রঙ ফর্সাকারী ক্রিমের কদর তাই কমে না কখনোই। কিন্তু আসলে সত্যিই কি এসব ক্রিমে গায়ের রং ফর্সা হয়। মুখের রং হয়তো একটুখানি উজ্জ্বল হয়, কিন্তু পুরো শরীরের ত্বক। সেটা কিন্তু আসলে হয়ে ওঠে না।
সুতরাং ত্বকে উজ্জ্বল্য আনার জন্য ঘরোয়া উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে বা বজায় রাখতে ঘরোয়া উপকরণই এখন সৌন্দর্য্য চর্চ্চা প্রাধান্য পাচ্ছে। নানা ধরনের ঘরোয়া ফেসপ্যাক রয়েছে ত্বকের উজ্জ্বলতায়।
ফর্সা, কোমল ও দাগহীন ত্বকের ঘরোয়া পদ্ধতি ত্বকের যত্নে একটু ঝামেলার বা সময় বেশি লাগলেও অনেকেরই এই ঘরোয়া পদ্ধতি ভাল লাগে। আমরা প্রাকৃতিক অনেক উপদান দিয়েই ত্বক ফর্সা, কোমল ও দাগহীন করতে পারি।
শসা স্বাস্থ্য ও ত্বক দুইয়ের জন্যই অনেক ভাল। শসা ত্বক ফর্সা ও দাগহীন করতে সাহায্য করে। শসার রস বা শসা গ্রেড করে ত্বকে অন্তত ৩০ মিনিট রেখে দিন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক ফর্সা হয়ে যাবে।
ত্বকের যত্নে ভিটামিন সি অনেক গুরুত্বপূর্ণ । ভিতামিন সি ত্বক ফর্সা ও কোমল করে । আমরা কমলালেবু ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারি কারন কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে।
ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার কোন তুলনা হয় না। অ্যালোভেরার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে ২০-২৫ মিনিট রেখে দিন এতে ত্বকের কালো দাগ এমনকি চোখের নিচের কালো দাগ ও দূর হবে।
টক দই ও মধু একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান এতে ত্বক ফর্সা ও কোমল হবে।
ত্বকের যত্নে আপনি কলা ব্যবহার করতে পারেন। কলা ত্বক কোমল ও স্বাস্থ্যকর করে।
তেঁতুলের প্যাক ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে ২দিন এর ব্যবহারে ভালো ফল পাবেন।
লেবু ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করে নিন। মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে মিশ্রণটি লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। মিনিট ১৫ পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ৩-৪ দিন এর ব্যবহারে ভালো ফল পাবেন।
মুসুর ডাল বেশ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভেজা মুসুর ডাল বেটে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
চিনি ও লেবুর রস মিশিয়ে ৫-৭ মিনিট মাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। প্রথমত, ত্বকে স্ক্রাবারের কাজ করে মরা চামড়া দূর করবে। দ্বিতীয়ত, ত্বক উজ্জ্বল করবে। এছাড়া ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ নারকেল তেলের একটি মিশ্রণ তৈরি করে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে পারেন।
টকদই, মুসুর ডাল, লেবুর রস, চালের গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি দিয়ে কনুই ও হাঁটুতে ম্যাসাজ করে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলে ময়েশ্চরাইজার লাগাতে হবে। এতে করে কালো দাগ কমে আসবে এবং হাঁটু-কনুইয়ের ত্বক বেশ উজ্জ্বল দেখাবে। দইয়ের সঙ্গে ভিনিগারের মিশ্রণও ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
কালো অংশে মিশ্রণটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে এলে ধুয়ে ফেলুন। বেশ কয়েকদিন ব্যবহার করে দেখুন তফাৎ নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন।
দুধের সঙ্গে মেশান ১ চাচামচ বেকিং সোডা। মিশ্রণ লাগিয়ে মিনিট পাঁচেক রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩বার করে দেখতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে এবং ঘরোয়াভাবে গায়ের রং ফর্সা করার আরো রয়েছে সহজ উপায়। শুধু তাই নয়, এভাবে যে ফর্সা রঙটা আপনি পাবেন সেটা হবে স্থায়ী। সৌন্দর্য সেটাই, যা ভেতর থেকে আসে। আসুন জেনে নেওয়া যাক প্রাকৃতিকভাবে রঙ ফর্সা করার আরো ২টি পদ্ধতি।
দুধ ও কাঁচা হলুদ
রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। প্রতিদিন এক গ্লাস উষ্ণ গরম দুধে আধা চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে পান করুন। এভাবে পান করতে না পারলে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। নিয়মিত হলুদ মেশানো দুধ পান করলে আপনার রং হয়ে উঠবে ভেতর থেকে ফর্সা।
দুধে কাঁচা হলুদ বাটা না মিশিয়ে করতে পারেন আরেকটি কাজ। দেড় ইঞ্চি সাইজের এক টুকরো হলুদ নিন। তারপর টুকরো করে কেটে এক গ্লাস দুধে দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। দুধ গাঢ় হলুদ রঙ ধারণ করলে পান করুন। এভাবে প্রতিদিন একবার করে পান করতে থাকুন।
কাঁচা হলুদ
শুধু দুধের সঙ্গে নয়, বাহ্যিক রূপচর্চাতেও হলুদ আপনার রঙ ফর্সা করতে সহায়তা করবে। বিশেষ করে কালচে ছোপ দূর করতে এই পদ্ধতি খুব কার্যকর।
উপকরণ : দুধ ৩ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, এবং কাঁচা হলুদ বাটা ১ চা চামচ।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
দুধ, লেবুর রস ও হলুদ বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ বা পেস্ট তৈরি করুন। সারা মুখে এই পেস্ট ভালভাবে লাগিয়ে প্যাকটি শুকনো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছে নিন। গরম পানিতে মুখ ধোবেন না এবং অন্তত ১২ ঘণ্টা রোদে যাবেন না। নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বকের রং হয়ে উঠবে ফর্সা, কোমল, দাগমুক্ত ও সুন্দর। বাড়িতে বসে প্রাকৃতিক উপায়ে নিজে থেকে হয়ে উঠুন ফর্সা, সুন্দর।